অমাবস্যার রাত্রে কবরস্থান থেকে মৃত লাশের লিভার কেটে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু কেন? সম্পুর্ন গল্প একসাথে।

 অমাবস্যার রাত্রে কবরস্থান থেকে মৃত লাশের লিভার কেটে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু কেন?? যা আজও রহস্যময়। 



এক ভয়ংকর ভুতের গল্প






আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি, আপুর সাথে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক কাহিনি.....


___________________________________


#সবেমাত্র আপু চাকরিতে জয়েন হয়েছেন। চেহেরাটা যেমন সুন্দর, তেমনি মেধাবীও বটে। অনেকেই আপুকে 'সুস্মিতা' বলে ডাকতেন। তবে উনি অ্যাগ্রোফোবিয়া রোগে আক্রান্ত। বিশেষ আকৃতির মানব ও অন্ধকারে ভয় পেতেন। 'বাবা বলেন' আপু বেশ কয়েকবার আত্মহত্যা করতে চেয়েছেন। কিন্তু কেন?? তা আজও জানা যায়নি। কখনো ঘুমের মধ্যে চিৎকার দিয়ে উঠতেন, কখনো মাঝরাতে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেন, কখনোই বা নিজের হাতে কামড় দিয়ে রক্ত চুষে খেতেন। এমন ভয়ানক দৃশ্য দেখে ফ্যামিলির সবাই ভয় পেয়ে যায়। আর ভাবতে লাগলেন, আপুকে বিয়ে দেওয়া ঠিক হবেনা। যথাসম্ভব চিকিৎসা করা। কিন্তু লক্ষ টাকা খরচ করার পরও কোন লাভ হয়নি। দিনদিন শুকিয়ে যেতে লাগলো। একপর্যায়ে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। উনি শুধু একটি কথাই বলতেন, বিশেষ আকৃতির এক মানব যেনো গলা টিপে হত্যা করতে চাই।


আপুর সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ, কোনকিছুই গোপন রাখতেন না।  সবকিছু শেয়ার করতেন। তবে আপু ইদানীং কিছু বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন। যেমনটা, পিরিয়ডের এক সপ্তাহ পূর্বে এবং পরে প্রচন্ড পেট ব্যাথা, গলার পেছনে খামচি বা কামড়ের দাগ, বক্ষঃস্থলে লালচে স্পট, ঘুমের মধ্যে ভয়ংকর স্বপ্নের সম্মুখীন। এছাড়া ঘুমানোর সময় লক্ষ্য করতেন, বিশেষ আকৃতির এক মানব ছাঁদের উপর হাটাহাটি বা স্পর্শ করতে চাইতেন। সেদিনের পর থেকে আপু অ্যাগ্রোফোবিয়া রোগে আক্রান্ত। এরপর উনি সিদ্ধান্ত নিলেন, তান্ত্রিকের কাছে যাবেন। তখন আপু আর আমি দু'জন তান্ত্রিকের কাছে গেলাম।


তান্ত্রিকঃ 'মামনী' তোমার কি সমস্যা? যার জন্য তোমায় এত অস্থির দেখাচ্ছে।


আপুঃ বাবা আমি যখন ঘুমায়, তখন স্বপ্নে বিশেষ আকৃতির এক মানব এসে আমাকে স্পর্শ করতে চাই।


তান্ত্রিকঃ উনি দেখতে কেমন???


আপুঃ উনার হাতের নক-গুলো বেশ বড়, দাঁত-গুলো সুচালো। মুখটি খুবই ভয়ংকর ও ভয়ানক।


তান্ত্রিকঃ উনি এক 'ডিমন'। তোমার রুপের মায়ায় মুগ্ধ হয়ে ভালোবেসে ফেলেছে। উনি এতটাই ভয়ংকর যে, আমার মন্ত্র কাজ করবেনা। যাদের বান মারা বা তাবিজ করা হয়, আমি শুধুমাত্র তাদের চিকিৎসা করি।


উনি যখন বলেই দিলেন, মন্ত্র কাজ করবেনা। তাহলে করার কিছুই নেই। 'পরেরদিন' আমরা আরেক তান্ত্রিকের কাছে গেলাম। উনি খুবই ডেঞ্জারাসও লোভী। কাজ ঠিকই করেন, কিন্তু টাকা বেশি চার্জ করে। উনার মতে, আপুকে নাকি কালোজাদু করা হয়েছে। উনি বলেন, কালোজাদুর কিছু উপকরণ বাকি রয়েছে। সেগুলো সম্পূর্ণ হলে আপুকে চিকিৎসা করবেন। সেদিন দেখলাম, উনার কাছে দু'জন ভদ্রলোক কালোজাদু শিখতে এসেছে। 'রশিদ' এবং 'রহিত'। এরা দু'জন ভালো বন্ধু। 


তান্ত্রিক তাদের তিনটি শর্ত দেয়। যদি শর্তের একটিও ভুল হয়। তাহলে তাদের অবস্থা হবে খুবই ভয়াবহ। এই কাজটি অনেক ভয়ংকর ও কঠিন। 


শর্তঃ ০১


- সাহসী হওয়া লাগবে। গন্তব্যস্থলে যাওয়ার পথে কারো সাথে কথা বলা যাবেনা।


- অমাবস্যার দিন ঠিক রাত বারোটায় কবরস্থানে গিয়ে, এক সপ্তাহের মধ্যে কবর দেওয়া, এমন মহিলা থেকে লিভার কেটে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু ভুলেও মুখ দেখা যাবেনা।


তান্ত্রিকের কথা অনুসারে দু'জন রাত বারোটায় কবরস্থানের দিকে রওনা দেয়। যাওয়ার পথে বটগাছের নিচে সাদা কাঁপনে ডাকা এক বুড়ীর সাথে সাক্ষাৎ হয়। উনি বলেন, 'বাবা' তোমারা এত রাতে কবরস্থানে যেওনা। কিন্তু তারা উনার কথা অমান্য করে কবরস্থানে প্রবেশ করে। এছাড়া দু'জনের মধ্যে 'রশিদ' ছিলেন ভীতু টাইপের। তান্ত্রিকের কথামতো তারা লিভার-টি কেটে নেওয়ার সময় ছোট্ট একটি ভুল করে পেলেন। তাদের নিষেধ করা হয়েছিলো মুখ না দেখতে, কিন্তু রশিদ আবেগ সামলাতে পারেনি। যখন লাশের উপর থেকে কাপড়-টি সরানো হয়, তখন তারা তরতর করে কেঁপে উঠে। কেননা, লাশটি আর কেউ নয় বরং পথে সাক্ষাৎ হওয়া সেই বুড়ী-টি। 


শর্তঃ ০২


- লাশটি অবশ্যই আত্মহত্যা করা কোন এক নারীর হওয়া লাগবে।


- যখন পোস্টমর্টেমকৃত লাশটি এম্বুল্যান্সে করে এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে, ঠিক সেই মূহুর্তে লাশটির বাম হাতের তিনটি আঙ্গুল কেটে নিয়ে আসতে হবে।


চলবে...???


#এই কাহিনীটি সত্য নয়, তবে সত্যর অনুরুপ..


আর একটি কথা জাদের রহস্যময় গল্প পছন্দ তারাই আমাকে ফ্রেন্ডরিকোষ্ট দিবেন

এছাড়া আর কেউ ফ্রেন্ডরিকোষ্ট দিবেন না দয়া করে 







#অমাবস্যার রাত্রে কবরস্থান থেকে মৃত লাশের লিভার কেটে নিয়ে আসতে হবে....


পর্বঃ_০২

___________________________________


তান্ত্রিকের কথামতো তারা গ্রামের অলিতে-গলিতে খুঁজ করতে লাগলেন। কোথাও কোনো মহিলা আত্মহত্যা করছেন কিনা, কিন্তু বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও কোন লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তখন তারা বুদ্ধি করলেন, হসপিটালে গিয়ে খুঁজ করবেন। অবশেষে, এক মহিলার সন্ধান পেলেন। তখন তারা দু'জন একটি ব্রিজের মধ্যে এম্বুল্যান্সের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। ড্রাইভার আর ওয়ার্ডবয় গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্য লাশটি নিয়ে রওনা হলেন..মাঝপথে রশিদ ড্রাইভার'কে হাতে ইশারা করে থামতে বলেন....


রশিদঃ ভাই এত রাত্রে আমাদের গাড়ি পাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। আমাদের দু'জনকে যদি একটু তুলতেন, তাহলে খুবই উপকৃত হতাম।


ড্রাইভারঃ 'ভাই' এখানে তো বসার মতো কোন জায়গা নেই। যদি এমারজেন্সি হয়, সেক্ষেত্রে লাশের সাথে পেছনে বসতে পারেন।


রশিদঃ আচ্ছা ভাইয়া। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ


যখন লাশের শরীর থেকে সাদা কাপড়-টি  সরানো হয় তখন তারা মুগ্ধ হয়ে যায়। আসলেই মহিলা-টি অপরুপ সুন্দর। জীবনের এই প্রথম কাউকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখে রশিদ নিজেকে সামলাতে পারছেন না। তখন তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়ে যায়।


রশিদঃ দোস্ত, মহিলাটিকে স্পর্শ করতে মন চাইছে, একটু তৃপ্তি মিটিয়ে নিই??


রহিতঃ দোস্ত তুই এসব করিস না। আমাদের উদ্দেশ্য সেটা নয়, আমাদের উদ্দেশ্য বাম হাতের তিনটি আঙ্গুল কেটে নেওয়া। তোর জন্য আমাদের এতদিনের সাধনা বরবাদ হয়ে যাবে। এছাড়া তান্ত্রিক কি বলেছে মনে রাখা উচিত।


রশিদঃ আমার কালোজাদুর কোন দরকার নেই। আগে তৃপ্তি, পরের গুলো পরে বুঝা যাবে।


যখন রশিদ মহিলাটির বক্ষঃস্থল স্পর্শ করার চেষ্টা করে, সে মুহুর্তে অদ্ভুত কন্ঠস্বরে কান্না আওয়াজ আসে। প্লিজ..প্লিজ..প্লিজ.. আমাকে এত বড়ো সর্বনাশ করবেন না। এই শব্দ-টি পরপর তিনবারই শোনা যায়। তখন রশিদ চমকে উঠে, উনি কথা-টি দ্বারা কি বুঝাতে চেয়েছেন? আমাদের নাকি অন্যকিছু? একটুখানি পর, রহিত বাম হাতের তিনটি আঙুল-টি কেটে নেয়। কেটে নেওয়ার সময় মহিলাটির নাভি দিয়ে কুচকুচে কালো রক্ত বেরিয়ে আসে। তখন তারা আরও বেশি ভয় পেয়ে যায়। কাজ সম্পূর্ণ হলে, দু'জন মাঝপথে গাড়ি থেকে নেমে বাসায় চলে যায়। বাসার যাওয়া পথে রশিদ মহিলাটিকে কল্পনা করে, তার চোখে যেন ভেসে বেড়াচ্ছে। কিছুদূর পরে দেখা যায়, সত্যিই মহিলাটি নদীর পাড়ে বসে আছে। রশিদ মহিলাটিকে দেখতেই সামনের দিকে এগোতে লাগলেন। কিন্তু সে যত কাছে যেতে যাওয়ার চেষ্টা করে, মহিলাটি তত পেছনে যেতে চলে যায়। আসলে এসবকিছু রশিদের হ্যালুসিনেশন।  


সকালে রহিত জানতে পারে, রশিদ রাত্রে বাসায় আসেনি। সে কোথায় হারিয়ে গেছে তা এখনো জানা যায়নি। ঘটনার তিনদিন পর, দু গ্রাম পেরিয়ে রশিদের লাশ পাওয়া যায়। লাশটি খুবই বিকৃত সম্পূর্ণ। কেউ যেনো কামড়ে কামড়ে মাংস খেতে তৃপ্ত ছিল। গায়ে বিশাল আকৃতি নকের দাগ। এসব দেখার পর, রহিত চিন্তিত হয়ে পড়ে। কি দরকার ছিল এসবের?? অতি লোভ করতে গিয়ে বন্ধুকে হারালাম।


শর্তঃ_০৩ 


- রাত তিনটায় পুরানো কবরস্থানে গিয়ে মৃত লাশের ৭ টি হাড় নিয়ে আসতে হবে।


 - যাওয়ার পথে এক গলাকাটা লাশের সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে। তাকে তাবিজ-টি দিবে, কিন্তু উনার সাথে কথা বলা যাবেনা। 


___________________________________


'এরপর' রহিত একাই সাহসীকতার সাথে কবরস্থানের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। যাওয়া পথে সেই গলাকাটা লাশের সাথে সাক্ষাৎ হয়। পা-গুলো গাছের সাথে ঝুলছে, মাথাটি নিচে পড়ে আছে। এমন ভয়ংকর লাশ আগে কখনো দেখিনি। শরীর থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে রক্ত পড়তেছে। উনাকে যখন তাবিজ-টি দেওয়া হয়, তখন উনি বলেন...


গলাকাটা লাশঃ কবরস্থানে যেওনা 'বাবা'। তোমাকেও আমার মতো শাস্তি পেতে হবে।


রহিতঃ কেন? কি হয়েছে?


গলাকাটাঃ আমি টাকার লোভে মানুষকে জাদুটোনা বা কালোজাদু করতাম। আজ মৃত্যুর পরও সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করতেছি।


রহিতঃ এসব বানোয়াট গল্প শোনার সময় নেয় আমার।


সে উনার কথা ইগ্নোর করে কবরস্থানে ঢুকে পড়ে, আর একটি পুরাতন কবর বাঁচাই করেন। যেটি বহুদিন আগের। পরিশেষে, একটি কবর কুড়তে লাগলেন কিন্তু কবর-টি যত কুড়া হয় তত রক্ত বেরিয়ে আসে। রহিত এতটাই ভয় পেয়ে যায় যে, হাতুড়ি পেলে পালিয়ে আসতে চেষ্টা করে। হঠাৎ কোথাও যেনো উধাও হয়ে যায়। 


সকালে তেঁতুল গাছের নিচে রহিতের লাশ পাওয়া যায়। এছাড়া রহিতের পেটে অদ্ভুত কিছু চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়। চিহ্ন-গুলো ছিলো 'আরামীয়' ভাষায়। যার অর্থ, 'কালোজাদুর শেষ পরিণতি মৃত্যু'। রহিতের মৃত্যুর বেশ কয়েকদিন পর তান্ত্রিক আপুকে কল দেয়...


তান্ত্রিকঃ তোমাকে চিকিৎসা করার জন্য সব জিনিসপত্র প্রস্তুত। তুমি চাইলে কালকেই আসতে পারো?


আপুঃ হ্যাঁ বাবা, আমি কালকেই যাচ্ছি।


কিন্তু আপু রহিতের মৃত্যু সংবাদ শুনে আরও বেশি ভেঙে পড়ে। এটা কিভাবে সম্ভব। কে বা করা খুন করতে পারে? কতই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। পরেরদিন সকালে তান্ত্রিকের সাথে দেখা করতে গেলাম।


আপুঃ 'বাবা' আমার মাথায় একটি প্রশ্ন সারাক্ষণ ঘুরপাক খাচ্ছে। রহিতের মৃত্যু কিভাবে হলো?? 


তান্ত্রিকঃ 'ঘুল' জ্বীন দ্বারা। এরা খুবই খারাপ ও দুষ্ট প্রকৃতির। যারা মূলত কবরস্থানের সাথে সম্পৃক্ত থাকে।


আপুঃ আচ্ছা। কিন্তু আমাকে কে কালোজাদু করছে তা কি জানতে পেরেছেন আপনি??


তান্ত্রিকঃ তার জন্য তোমার কিছু চুল ও রক্ত প্রয়োজন??


এরপর, উনি মন্ত্র পড়তে লাগলেন। মন্ত্র পড়া শেষ হলে আপুকে চারটি তাবিজ দেয়। তাবিজ-গুলো যেনো বাড়ির চার কর্ণারে পুঁতে দেওয়া হয়। তার ১৪ দিন পর উনার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।


২-৩ দিন ভালোই কেটেছে, এ-র পরেরদিন আমরা দু'জন ঘুমাচ্ছিলাম, সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। আকাশে বিকট শব্দ। তখন আপু শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে, আর জোরে জোরে শ্বাস নেয়। আমি আপুকে জিজ্ঞেস করলাম?? কি হয়েছে? তুমি এত ভয় পাচ্ছো কেন? উনি বলেন, বেলকনির কাঁচের উপর এক রক্তাক্ত হাত দেখতে পেলাম। সে যেনো ভেতরে প্রবেশ করতে চাইছে। এটা কোন স্বপ্ন নয়। সত্যিই কেউ একজন বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। সে মুহুর্তে আমি তাকিয়ে দেখলাম, আসলেই এক মহিলা উঠানের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। উনার চোখ দিয়ে আগুনের ধোঁয়া, আর মুখ দিয়ে কুচকুচে কালো রক্ত বের হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ যেনো উনাকে পেছন থেকে টেনে ধরেছে, যার জন্য সামনের দিকে এগোতে পারছেন না। কিন্তু কে সে?? এমন ভয়ংকর দৃশ্য আজও চোখে ভেসে বেড়ায়। সেদিন আর বুঝার বাকি রইলো না, সত্যিই আপুকে কালোজাদু করা হয়েছে।


এভাবে ভয়ে ভয়ে দিনগুলো কেটে যায়। ঠিক ১৪ দিন পর তান্ত্রিকের সাথে দেখা করতে যাবো, এমন মুহুর্তে এক দুঃসংবাদ শুনতে পেলাম। যেটার জন্য আপু মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তান্ত্রিক নাকি ৩ দিন আগে মারা গেছে। গ্রামের অধিকাংশ লোকের মতে, এটা আত্মহত্যা ছিল। কিন্তু কেন বা কিভাবে তা জানা যায়নি।


তান্ত্রিকের মৃত্যুর পর আপুর অবস্থা আরও বেশি খারাপ হতে লাগলো। বেশ কিছুদিন ধরে খাওয়া দাওয়া না করায় চোখ-মুখ শুকিয়ে কঙ্কালের ন্যায় রুপ ধারণ করে। সে মুহুর্তে এক ভদ্রলোকের কথায় ত্রি-গ্রাম পেরিয়ে এক তান্ত্রিকের কাছে গেলাম। উনি আপুর অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে কি সমস্যা জানতে চাইলেন? এরপর আপুর সাথে ঘটে যাওয়া সবকিছু উনাকে খুলে বললাম....


তান্ত্রিকঃ 'মাগো' আমার অনেক বয়স হয়ে গেছে। এসব জাদুটোনা বা কালোজাদুর কাজ ছেড়ে দিছি। কিন্তু 'সুস্মিতার' এমন অবস্থা দেখে না করতে পারলাম না।


আমিঃ বাবা যেভাবেই হোক আপুকে চিকিৎসা করা লাগবে।


তান্ত্রিকঃ তোমার বাবার নাম, সুস্মিতার চুল, এক টুকরো গরুর কলিজা, সাদা কাপড় মুড়িয়ে কাল নিয়ে আসবে।


পরেরদিন, তান্ত্রিক আপুর চোখ দু'টি কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয়...


তান্ত্রিকঃ তুমি কি কিছু দেখতে পাচ্ছো??


আপুঃ হ্যাঁ। বৃষ্টির রাতের সেই মহিলাটি। যে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে।


তান্ত্রিকঃ উনার নাম 'জোহরা'। উনি তোমাকে কালোজাদু করছে।


আপুঃ চমকে উঠলাম, আপনি কি বলেন এসব? আপনার মাথা ঠিক আছে। জোহরা হলেন আমার ''মা"।


তান্ত্রিকঃ হ্যাঁ। তোমার মা তোমাকে কালোজাদু করছে।


আপুঃ আপনি ভুলভাল বলছেন না তো? আমার মা মারা গেলেন আজ পাঁচ বছর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে কিভাবে মৃত্যুর পর আমাকে কালোজাদু করতে আসবে?? বিষয়টি হাস্যকর। 


তান্ত্রিকঃ উনি জীবিত অবস্থায় তোমাকে কালোজাদু করছে। তার বেশ কিছু কারণ ছিলো, এছাড়া তোমার মা'য়ের মৃত্যুও এক রহস্যময়।


চলবে...???






#অমাবস্যার রাত্রে কবরস্থান থেকে মৃত লাশের লিভার কেটে নিয়ে আসতে হবে....


পর্বঃ_০৪ 


তান্ত্রিকঃ তোমার মা'য়ের মৃত্যুও এক রহস্যময়।


আপুঃ আমার মায়ের মৃত্যু হলো কিভাবে?? আমি তো এসবের কিছুই জানতাম না।


তান্ত্রিকঃ সে অনেক লম্বা কাহিনি। তোমাকে আমিই কালোজাদু করছিলাম।


আপুঃ কেন করলেন? কি হয়েছিল আমার সাথে?


তান্ত্রিকঃ আচ্ছা, তাহলে সম্পূর্ণ কাহিনি শুনো....


তখন তুমি জোহরার গর্ভে ছিলে, তোমার বাবার পোস্টিং হয়েছিল দূর-শহরে। যেতে আসতে অনেক সময় লাগতো, হঠাৎ এত দূর থেকে ফিরে আসা সম্ভব ছিলো না। একদিন তোমার বাবার রুপ ধারণকারী এক জ্বীন আসে। উনি জোহারাকে বলে, আমি ফিরে এসেছি। তখন জোহরা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়, সত্যি সত্যি তুমি ফিরে আসলে। জোহরা যখন জিজ্ঞেস করলেন, আপনার ফোন কোথায়? উনি বলে, গাড়িতে উঠার সময় পড়ে ভেঙে গেল। তাই আসার সময় কল দিতে পারিনি। ওদিকে তোমার 'বাবা' জোহরাকে বারবার কল দিচ্ছিলো। কিন্তু কোন সংযোগ পাওয়া যায়নি। সেই মানুষ রুপি জ্বীন জোহারার সাথে দু’মাস সংসার করছিল। হঠাৎ একদিন কোথাও উধাও হয়ে যায়। তখন জোহরা অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ে, কিছু না বলে কোথায় চলে গেল। তার তিন মাস পর তোমার বাবা শহর থেকে ফিরে এসে জোহরা'কে বকাবকি করে। এতদিন ধরে কল দিচ্ছিলাম সংযোগ পাচ্ছি না কেন?? এটা শোনার পর জোহরা আশ্চর্য হয়ে যায়। কি বলে এসব?? আমার সাথে তো প্রতিদিন আপনার কথা হয়। তখন তোমার বাবা বলে, কই না তো? আমি তো আজ তিন মাস পর ফিরে আসলাম। এর মধ্যে তো একদিনও কথা হয়নি।


তারপর বিষয়টি নিয়ে জোহরা আমার কাছে আসেন। জানতে চাইলেন, সেই মানুষটি কে?? আমি বললাম, উনি হলেন মানুষ রুপি এক জ্বীন। যারা সুন্দরী নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন আকৃতি রুপ ধারণ করে। সেদিনের পর, জোহারা পেটের জ্বালাযন্ত্রণায় ছটফট করতেন। মনে হচ্ছে, কেউ যেনো নাড়িভুড়ি কামড়ে কামড়ে খেতে তৃপ্ত ছিলেন। এছাড়া তোমার বাবাও মাঝেমধ্যে পাগলামি করতেন। কখনোই বাথরুমে শুয়ে পড়তেন, কখনো ছাঁদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করতে চাইতেন। 


একদিন অমাবস্যার রাত্রে তোমার জন্ম হয়। পেটে অসহ্য জ্বালাপোড়া, চারদিকে ঘুটঘুটে আঁধার। গাছের ডালে বসা কতগুলো কাক অদ্ভুত কন্ঠস্বরে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে লাগলো। এরা মূলত তোমাকে নিতে এসেছিল। সেই মুহূর্তে আমি মন্ত্র পড়তেই কাকগুলো চলে যায়। তোমার নাভি দিয়ে কুচকুচে কালো রক্ত বের হচ্ছিল। সেখান থেকে এক গ্লাস রক্ত কুকুরকে খাওয়ানো হয়। খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কুকুরটি মারা যায়। তখন সেই জ্বীন-টি অতৃপ্ত হয়ে ফিরে যায়।


তোমাকে সেই মানুষ রুপি জ্বীনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কালোজাদু করা হয়েছিল। কালোজাদুর প্রক্রিয়া-টি জোহরার রক্ত দিয়ে সম্পূর্ণ হয়। ৭ টি রক্তমাখা রুটি, প্রতিদিন একটি করে মাঝরাতে পুকুর পাড়ে রেখে আসতাম। সেই রুটি-গুলো জ্বীন এসে খেয়ে ফেলতেন। এছাড়াও কবরস্থানে ২টি তাবিজ পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। কালোজাদুর পর বেশ কয়েক বছর ভালোই কাটছিল। হঠাৎ একদিন জোহানা খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। শুকিয়ে কঙ্কাল ন্যায় রুপ ধারণ করে। ঠিক তোমার অবস্থাও আজ জোহরার ন্যায় রুপ নিচ্ছে। কিন্তু সেই মানুষ রুপি জ্বীন এতটাই শক্তিশালী ছিলো যে, তার সাথে লড়াই করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে, জোহরা মারা যায়।


তুমি প্রতিদিন বিশেষ আকৃতির যে মানব-টি দেখতে পাও, সেটি হচ্ছে ঐ মানুষ রুপি জ্বীন। সে তোমার কোন ক্ষতি করবেনা। তবে আমার যতটুকু ধারণা, সে তোমাকে তার রাজ্যে নিয়ে যেতে চাই। তুমি যত অসুস্থ হবে, জ্বীন তত শক্তিশালী হবে। কেননা, অসুস্থ ব্যক্তির উপর মন্ত্র কাজ করেনা। 


এখন তোমাকে যে কয়টি তাবিজ দিলাম। সেগুলো পানিতে মিশিয়ে গোসল করবে। আশা করি, দুঃস্বপ্ন ও জ্বীন তোমায় স্পর্শ করতে পারবে না। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। যদি এরপরও ভালো না হয়, তাহলে পুনরায় কালোজাদু করতে হবে।


চলবে...??





#অমাবস্যার রাত্রে কবরস্থান থেকে মৃত লাশের লিভার কেটে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু কেন?? যা আজও রহস্যময়। 


পর্বঃ_অন্তিম পর্ব 


এখন তোমাকে যে কয়টি তাবিজ দিলাম। সেগুলো পানিতে মিশিয়ে গোসল করবে। আশা করি, দুঃস্বপ্ন ও জ্বীন তোমায় স্পর্শ করতে পারবেনা। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। যদি এরপরও ভালো না হয়, তাহলে পুনরায় কালোজাদু করতে হবে....


তান্ত্রিকের কথামতো বেশ কয়েকদিন ভালোই কাটছিলো। হঠাৎ একদিন কিচেন রুমে প্রবেশ করে হতবাক হলাম, কেউ যেনো সব জিনিসপত্র ভাঙচুর করে পেলছেন। যেখানে অদ্ভুত কিছু পায়ের চাপ আর শয়তানি চিহ্ন লক্ষ্য করলাম। এসব কোন স্বাভাবিক মানুষের কাজ নয়, হয়তো মানুষ রুপি সেই জ্বীনের কাজ। উনি চিহ্ন-গুলো দ্বারা কিছু একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে, সেগুলো আমরা বুঝতে পারছিনা।


বিষয়টি পরবর্তীতে তান্ত্রিকের কাছে জানানো হয়..


তান্ত্রিকঃ সেই জ্বীন এখন প্রচন্ড রেগে গেছে। তাবিজ-গুলোর জন্য তোমাকে স্পর্শ করতে পারছেনা। সেজন্য খুবই রাগান্বিত।  


আপুঃ কিন্তু উনি চিহ্ন-গুলো দ্বারা কি বুঝিয়েছেন???


তান্ত্রিকঃ এগুলো প্রতিশোধের চিহ্ন। কোন জ্বীন যখন কারো প্রতি অতৃপ্ত হয়, তখন চিহ্ন-গুলো দ্বারা বুঝিয়ে দেয়, খুব শীঘ্রই প্রতিশোধ নেবে।


আপুঃ উনি কার উপর প্রতিশোধ নেবেন??


তান্ত্রিকঃ আমার উপর অতৃপ্ত। কাল স্বপ্নে সেই জ্বীনের সাথে সাক্ষাৎ হয়, আমি যদি তোমাকে উনার কাছ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করি, তাহলে আমাকে হত্যা করবে।


আপুঃ তাহলে তো সমস্যা আরও বেড়ে গেল। আমার জন্য আপনিও বিপদে পড়ে গেলেন??


তান্ত্রিকঃ 'মাগো' আমার তো অনেক বয়স হয়ে গেছে। আজ না হয় কাল মরতে হবে। কিন্তু তোমার তো একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ রয়েছে। সেই জ্বীনের জন্য কেন তোমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করবে।


আপুঃ এখন করা কি যায়। আমার তো খুব ভয় হচ্ছে যদি আপনার কোন ক্ষতি হয়।


তান্ত্রিকঃ পুনরায় 'কালোজাদু' করতে হবে। এমন কালোজাদু কারো মৃত্যুর ইঙ্গিত সরুপ। 


আপুঃ কারো মৃত্যুর ইঙ্গিত সরুপ মানে??


তান্ত্রিকঃ তুমি প্রথম পক্ষ, আমি দ্বিতীয় পক্ষ আর জ্বীন তৃতীয় পক্ষ। যদি কালোজাদু সম্পূর্ণ না হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের দু'জনের মধ্যে কোন একজনের মৃত্যু হতে পারে। যদি সম্পূর্ণ হয়, তাহলে বোতলের মধ্যে জ্বীনকে বন্দী করে রাখা যাবে।


আপুঃ আমার তো শুনতেই গায়ের প্রতিটা লোম খাঁড়া হয়ে গেল। জানিনা কি হতে যাচ্ছে??


এরপর বটগাছের নিচে চতুর্ভুজ আকৃতি একটি চিত্র অংকন করা হয়। সেই চিত্রের চার কর্ণারে চারটি মোমবাতি, চারটি শকূরের লিভার, মাঝখানে একটি রক্তাক্ত পুতুল আর এক গ্লাস সুস্মিতার রক্ত রাখা হয়। যখন তান্ত্রিক মন্ত্র পড়া শুরু করলো, সে মুহুর্তে তুফান শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে মোমবাতি গুলো নিবে যায়। তখন আপু আর আমি তো এতটাই ভয় পেয়েছি যে, যা বলার মতো নয়। তার কিছুক্ষণ পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। 


তারপর তান্ত্রিক হাত দিয়ে আপুর মুখ থেকে কতগুলো চুল আর মাংসের টুকরো বের করে। সেগুলো দেখে আপু আরও আশ্চর্য হয়ে পড়ে, এটা কিভাবে সম্ভব? এমন সময় তান্ত্রিক জ্বালাযন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো, মুখ দিয়ে অঝোরে রক্ত বেরে হচ্ছে। আমরা দু'জন চেপে ধরেও রক্ত বন্ধ করতে পারিনি। কোরবানির গরু জবাই করলে যেমন গরু ছটফট করে, তেমনি সেভাবে ছটফট করতে করতে তান্ত্রিকের মৃত্যু হয়। আমার চোখে আজও উনার ছবি ভেসে বেড়ায়। কতই না কষ্ট পেয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। উনি মৃত্যুর আগে আপুকে একটি কথা বলে গেলেন, জ্বীন তোমাকে আর স্পর্শ করতে পারবেনা কিন্তু তুমি যখন প্রেগন্যান্ট বা গর্ভবতী হবে তখন জ্বীনের আগমন ঘটবে।


______________সমাপ্ত________________


✍️✍️✍️✍️✍️✍️ সিক্রেট স্টার

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম