'নারী ছাড়া কোন ঘর পরিপুর্ণ হয় না। লেখিকা: সুমাইয়া সুমি।

 উফ এসব কি রান্না করছো, সারাদিন বাসায় কি করো হ্যা? শুধু শুয়ে বসে থাকো। বিয়ের এতোদিন হয়ে গেলো তাও রান্না'টা ঠিক মতো শিখলে না অ'স'হ্য"।

"তুমি একটু বসো, আমি নতুন করে কিছু বানিয়ে দিচ্ছি"।
"থাক অনেক বানিয়েছো আর কিছু লাগবে না, আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে"।
'এই বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে গেলাম অফিসের জন্য রেডি হতে। আমি আয়মান মাহমুদ আর যার সাথে এতক্ষণ রা'গা'রা'গি করলাম সে হচ্ছে আমার স্ত্রী মেহেরিমা। আমি ওকে ভালোবেসে মেহের বলে ডাকি। ওকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। বিয়ের ১ বছর হয়ে গেছে। বাবা-মা গ্রামে থাকেন। চাকুরীর জন্য আমি মেহের'কে নিয়ে ঢাকায় থাকি'।
অফিসের জন্য রেডি হবো কিন্তু শার্ট খুঁজে পাচ্ছি না তাই চিৎকার করে ওকে ডাকলাম...
'মেহেরররর'।
'মেহের দৌঁড়ে এসে হতভম্ব গলায় বললো, কি হয়েছে এভাবে ডাকছো কেন'?
"আমি রাগী চোখে তাকিয়ে বললাম,, আমার সাদা শার্ট কই? ধুঁয়ে দিতে বলেছিলাম। কি করো বাসায় সারাদিন হ্যা? কোনো কাজ ঠিক করে করতে পারো না। ধুরর বি'র'ক্তি'ক'র"।
'এসব বলে রাগে গজগজ করতে করতে অন্য একটা শার্ট পরে অফিস চলে গেলাম আর মেহের মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো'।
"অফিস থেকে সন্ধ্যায় ফিরে এসে দেখি দরজায় তালা ঝুলছে। মনে মনে ভাবলাম 'মেহের আমাকে না বলে কোথায় গেলো' এসব ভাবতে ভাবতে আমার কাছে থাকা এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। ঢুকতেই ডাইনিং টেবিলের উপর রাখা একটা কাগজের উপর চোখ পড়লো। সেটা খুলে দেখি মেহেরের লেখা 'আমি বাবার বাড়ি যাচ্ছি'। মনে মনে ভাবলাম 'যাক বাবা কয়েকদিন তাহলে শান্তিতে থাকতে পারবো। বাহিরের ভালোমন্দ খেতে পারবো'। এসব ভেবে একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম"।
"ফ্রেশ হয়ে এসে পড়লাম ঝামেলায়, এখন খাবো কি?খাওয়ার কিছু নাই। তাই কিছু না খেয়েই ঘুমাতে গেলাম কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না। প্রথমত পেটে ক্ষুধা, দ্বিতীয়ত বিছানা খালি খালি লাগছে আসলে আমি প্রতিদিন মেহেরকে বুকে নিয়ে ঘুমাই। আজকে মেহের নেই তাই ঘুমও আসছে না। এপাশ-ওপাশ করতে করতে কোনো রকম রাত'টা পার করলাম। সকাল হতেই ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য রেডি হবো তখন পড়লাম আবার সমস্যায়, নিজের প্রয়োজনীয় কিছুই হাতের কাছে খুঁজে পাচ্ছি না৷ মেহেরের কথা খুব মনে পড়ছে, ও থাকতে আমার কিছুই খুঁজে বের করতে হয় নি। তারপরও কষ্ট করে সব খুঁজে বের করে অফিসে গেলাম। টিফিন আওয়ারে রেস্টুরেন্টে গেলাম খেতে কিন্তু এতো ভালো খাবারও যেন মুখে ভালো লাগছে না৷ মেহেরের রান্নাকে মিস করছি, কিছুই ভালো লাগছে না। কোনো রকম একটু খেয়ে চলে আসলাম। এভাবে কেটে গেলো ৫ দিন। এই ৫ দিনে আমি মেহেরের শূন্যতা হারে হারে বুঝতে পারছি। ওকে আমি কতটা ভালোবাসি তাও উপলব্ধি করতে পারছি। ৫ দিন ধরে ঠিক মতো না খেতে খেতে চেহারার অবস্থা নাজেহাল হয়ে গেছে। আর অপেক্ষা করতে পারলাম না। চলে গেলাম শ্বশুরবাড়িতে। মেহেরকে ফিরিয়ে আনতে হবে। ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিব। ওর সাথে আর কখনো খারাপ করবো না। আসলে খারাপ ব্যবহার করতাম না, অফিসের কাজের চাপে মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেছিলো তাই ওর উপর মেজাজ দেখিয়ে ফেলতাম তার জন্য আমি অনুতপ্ত"।
"এখন আমি আমার শ্বশুর আব্বার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছি। সে কোনো কথা বলছে না শুধু আমাকে পর্যবেক্ষন করছে। কিছুক্ষন পর নিজে থেকেই উঠে চলে গেলেন তারপর মেহের সামনে আসলো। ওকে দেখে বুকে একটা আলাদা শান্তি অনুভব করলাম। মনে হচ্ছে কতদিন ওকে দেখি না। ও আমাকে দেখেই বললো...
'কি ব্যাপার আপনি এখানে'?
'ফিরে চলো মেহের'।
'কোথায়'?
'তোমার বাসায়'।
'আমি তো আমার বাসাতেই আছি'।
'এই বাসা নয়, যেই বাসা তুমি নিজের হাতে সাজিয়েছো সেই বাসা'।
'না আমি সেখানে গিয়ে কি করবো, আমি তো কোনো কাজ করি না।
''স্যরি মেহের, আসলে কাজের চাপে মেজাজ খিটখিটে হয়ে গেছিলো তাই আর কি'...
'হয়েছে বুঝেছি'।
'আর কখনো খারাপ ব্যবহার করবো না প্রমিস। ফিরে চলো প্লিজ'।
'চেহারার এই অবস্থা কেন'?
'তোমার হাতের ওই আধপোড়া খাবার খেতে খেতে অভ্যাস হয়ে গেছে, তোমার হাতের খাবার পাই নি তাই রেস্টুরেন্টে ভালো করে খেতেও পারি নি। আর তোমাকে ছাড়া রাতে ঘুমাতে পারি না তাই....
"আমি আর কিছু বলার আগেই মেহের ফিক করে হেসে দিলো। আমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলাম। মনে হচ্ছে যেন কত দিন পর এই হাসি দেখলাম। সত্যিই এই মানুষ'টাকে ছাড়া আমি অচল। এই মানুষ'টাকে ছাড়া আমার ঘর পরিপূর্ণ হয় না"।
নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম