সারপ্রাইজ।লেখিকা:সুমাইয়া সুমু।

 'আমি তোমাকে ভালোবাসি আরিয়ান'।

'তো'
'তো মানে কি, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে'।
'বিয়েটা করে নাও'।
'আরিয়াননন'।
'কি হলো'?
'কত সহজে বলে দিলে বিয়েটা করে নিতে, আমি তোমাকে ছেড়ে কিভাবে থাকবো'?
'অভ্যাস হয়ে যাবে'।
'বাহ্ আরিয়ান, তুমি এখন আমাকে ছেড়ে থাকতেও পারবে। তুমি আমাকে কখনোই ভালোবাসো নি। তিন বছর ধরে টাইমপাস করলে ছিঃ। আমি তোমাকে সবার থেকে আলাদা মনে করেছিলাম'।
.......
'আরিয়ান আমি তোমায় কিছু বলছি'।
'হুম শুনছি তো'।
'আমি তোমার সাথে আর কখনো কথা বলবো না আরিয়ান। আমি তোমাকে বিশ্বাস করতাম, ভালোবাসতাম। আজকে সব শেষ হয়ে গেলো। আমি বিয়েটা করে নিবো। তুমি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারলে আমিও থাকতে পারবো'।
"এই বলে কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে চলে আসলাম। এভাবে প্রায় বেশ কিছুদিন কেটে গেলো আরিয়ানের সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। আমিও কোনো কল, মেসেজ করি না আর সেও করে না। এর মধ্যে বাবা আমার বিয়ের তোরজোর শুরু করে দিয়েছেন। সবাইকে দাওয়াত দিয়ে ফেলেছে। বিয়ের তারিখও ঠিক হয়ে গেছে কিন্তু আমার মনে কোনো আনন্দ নেই, মুখে কোনো হাসি নেই। আমি নির্লিপ্ত, নির্বিকার"।
"দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে আসলো, আজ আমার বিয়ে। কিন্তু কার সাথে আমি তা জানি না। ছেলের ছবি দেখি নি, নামও জানি না। অবশ্য জানার প্রয়োজনও মনে করছি না। মনে আনন্দ না থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না। তার উপর আমি আমার ভালোবাসার মানুষ'টাকে হারিয়ে ফেলেছি। এখন কার সাথে বিয়ে হলো না হলো তা জেনে আমি কি করবো। এখন শুধু দুনিয়ায় নিয়মে চলতে হবে, এসব কথা মনে মনে ভেবে চুপচাপ বসে আছি। কিছু পার্লারের মেয়ে এসে আমাকে সাজাতে লাগলো। হঠাৎ শুনতে পেলাম 'বর এসেছে, বর এসেছে' বলে বাচ্চারা হইচই করতে লাগলো। বুকটা ধক করে উঠলো তাহলে আমি সত্যিই আমার ভালোবাসার মানুষ'টাকে হারিয়ে ফেললাম। এটা ভেবে চোখ থেকে দু'ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়লো"।
" আমাকে আর হবু বরকে আলাদা আলাদা রুমে বসানো হয়েছে। কাজী সাহেব প্রথমে আমার বরের কাছে গিয়ে সব নিয়মকানুন শেষ করে কবুল বলতে বললে সে কবুল বলে দেয় তারপর আসে আমার কাছে, আমাকে কবুল বলতে বলে কিন্তু আমার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। কত স্বপ্ন ছিল আমি আমার ভালোবাসার মানুষ'টাকে নিজের করে পাবো কিন্তু কিছুই হলো না এসব ভাবছিলাম তখনই আমার এক কাজিন এসে আমাকে ধা'ক্কা দিয়ে বললো কিরে কবুল'টা বল। আমি অনুভুতি শূন্য হয়েই আসতে করে কবুল বলে দিলাম। সবাই একসাথে 'আলহামদুলিল্লাহ' বলে উঠলো"।
"বিয়ে শেষ হয়ে যেতেই আমাকে সবাই মিলে নিয়ে গিয়ে বরের পাশে বসিয়ে দিলো। আমি তাও বরের দিকে তাকালাম না, মাথা নিচু করে বসে রইলাম। সবাই কথা বলছে, আনন্দ করছে আমার কানে যেন কিছুই ঢুকছে না"।
"বিদায় অনুষ্ঠান শেষে শ্বশুরবাড়ি চলে আসলাম সবার সাথে পরিচয় পর্ব শেষ হতেই সবাই আমাকে নিয়ে গিয়ে বরের রুমে বসিয়ে দিলো। আমি আকাশ-পাতাল সব ভাবনা নিয়ে বসে রইলাম। রাত ১১.৩০, তখন দরজা খোলার শব্দ পেলাম। আমি একটু আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখি একজন খাটের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন"। সে কিছু বলে উঠার আগেই আমি বললাম,,
'আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না, আমার সময় লাগবে। আমি একজনকে ভালোবাসি'।
'হুম জানি তো, তুমি আরিয়ান নামের একটা বড্ড বেশি ভালোবাসো'।
"পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলাম। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি এটা আর কেউ না, আমার ভালোবাসার মানুষ আরিয়ান"। আমি আবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,,
'তুমি!! তুমি এখানে কি করছো'?
'কেন অন্য কেউ থাকার কথা ছিলো বুঝি'?
'না মানে, আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে কোথায়'?
'তোমার আমার সাথেই বিয়ে হয়েছে জান'।
'অবাক হয়ে,, মানে'?
'তুমি যেদিন বিয়ের কথা বললে তার আগের দিন আমি ভালো একটা জব পাই, জব পাওয়ার সাথে সাথে আমি তোমার বাবার কাছে গিয়ে তার হাতে ধরে বুঝিয়ে শুনিয়ে আমানের বিয়ের জন্য রাজী করেছিলাম। পরেরদিন তোমাকে এই কথাগুলো বলার জন্যই ফোন করেছিলাম কিন্তু কেঁদে কেটে তোমার বিয়ের কথা বললে তাই ভাবলাম তুমি এখনো জানো না তোমার কার সাথে বিয়ে হচ্ছে তাই একটা সারপ্রাইজ দেই৷ আর সেই সারপ্রাইজ দিতে গিয়েই এতো কান্ড হলো'।
'আমি অবাক হয়ে ওর কথা শুনতে শুনতে হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠে ওকে জাপটে জড়িয়ে ধরে বললাম,, তুমি জানো আমি কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আজকেই প্রথম, আজকেই শেষ,, আর কখনো এমন সারপ্রাইজ দিও না। আমি কোনো সারপ্রাইজ চাই না। আমি তোমাকে হারাতে পারবো না। ভীষন ভালোবাসি তোমাকে'।
'আরিয়ান আমাকে বুক থেকে তুলে আলতো করে চোখ মুছে দিয়ে বললো, আর কখনো এমন করবো না জান। আর কেঁদো না প্লিজ। ভালোবাসি'।
"আমি কোনো কথা না বলে আরিয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম"।
নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম