সম্পর্কের_ভিত্তি_বিশ্বাস। লেখিকা: জান্নাত।

 অফিসে যাওয়ার জন্য স্বামীকে টিফিন দিয়ে বিদায় জানিয়ে আসার সময় শুনতে পেলাম এক প্রতিবেশী আন্টি বলছে কি বাবা কেমন আছো?দিন কাল কেমন কাটছে?

উত্তরে তিনি বললেন,জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
আন্টি বললেন তা সুন্দরী বউ রেখে যে অফিসে যাও,বাসার দিকে একটু নজর রেখো,দিন কাল ভালো না আর সুন্দরী মেয়েদের তো বিশ্বাসই নেই.........
উত্তরে আমার স্বামী আর কিছু না শুনেই শুধু মুচকি হাসি দিয়ে অফিসে চলে গেলো।খুব খারাপ লাগলো।তাও কিছু না ভেবে রুমে চলে গেলাম।
আমাদের বিয়ে হয়েছে পারিবারিক ভাবেই।দুজনেরই বিয়ের আগে অন্যত্র কোথায় কোনো সম্পর্ক ছিলো না।প্রথমে দুজনের মাঝে কিছুটা জড়তা কাজ করলেও পরবর্তী থেকে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পেরেছিলাম।আমাদের মধ্যে ভালোবাসার কোনো কমতি নেই।চাকরির সূত্রে আমরা দুজন আলাদা থাকি।শশুর শাশুড়ী আসবেন আর কিছু মাস পর।
রাতে উনি যখন বাসায় এসে বুজলেন আমার মন খারাপ তখন একটা কথাই বললেন অন্য কারো কথায় মন খারাপ করার কোনো মানে হয় না।তাদের কাজই বিবেচনা না করে মানুষকে কষ্ট দিয়ে কথা বলে ফেলা।
বেশ কিছু দিন পর রাতে যখন উনি বাসায় আসছিল তখন ঐ আন্টিটা দেখেই বলতে লাগলো,দেখেছো বলেছিলাম না বউকে দেখে রেখো,এখন হলো তো আজকে আমি নিজ চোখে দেখেছি একটা অচেনা ছেলেকে তোমাদের ফ্ল্যাটের ভিতর যেতে।নিশ্চয়ই ঐ ছেলের সাথে কিছু চলছে।এখনও হয়তো ছেলেটা বাসায় আছে গিয়ে হাতে নাতে ধরো।এগুলো শুনে তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন ঐ ছেলে আমার শালাবাবু,জান্নতের ছোট ভাই।আমি আগেই জানতাম ও আজকে আসবে।আর আসার পর রাইসা আমাকে জানিয়েছেও।একটা কথা বলি আন্টি কিছু মনে করবেন না।এইযে যে অন্যের এত খবর রাখেন না এই খবর গুলো যদি নিজ ফ্যামিলির রাখতেন তাহলে আপনার সংসারটা এত অশান্তির হতো না।এইযে যেমন খবর রাখেন আমার বউ কখন কি করে কে কখন আমাদের বাসায় আসলো,এগুলো না করে যদি নিজের সন্তানদের দিকে নজর দিতেন তাহলে হয়তো আপনার মেয়ে কারো সাথে পালিয়ে যেতে পারতো না।আপনার ছেলে অন্যের কথায় কান দিয়ে নিজের বউ এর সাথে অশান্তি করতো না।তাই বলছি কি অন্যের ঘরে উঁকি দেওয়া বন্ধ করেন।আপনাদের এরকম সত্য মিথ্যা তথ্যের কারনে অনেক সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হয়।কেন শুধু শুধু অন্যের ঘরের অশান্তি সৃষ্টির কারন হবেন।এতে কি ভালো আছেন।সামনা সামনি কেউ কিছু না বললেও অগচরে খোঁজ নিয়ে দেখবেন আপনার মতো তারাও আপনার নিন্দা করছে।তাই আবারও বলছি নিজেদের দিকে বেশি করে লক্ষ্য দেন।আর আমি জানি আমার স্ত্রী কেমন।আপনার গোয়েন্দাগিরি করতে হবে না।আজকে ভালোভাবে বললাম এরপরে যদি একই কাজ করেন তো এখন যে সম্মান পাচ্ছেন পরবর্তীতে এই সম্মান পাবেন না।
বলে তিনি চলে আসলেন।তারপর পরই আমার ভাই বাইরে থেকে আসলে দুজনে কুশল বিনিময় করে গল্প গুজব, খাওয়া দাওয়া করে যার যার রুমে গেলো।
আমি সব গুছিয়ে এসেতার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,আচ্ছা যদি কখনও দেখেন আমি আপনাকে না জানিয়ে কিছু করেছি বা লুকিয়েছি তাহলে এখনকার মতো কি তখনও এভাবে আমার হয়ে কথা বলবেন?হঠা এই প্রশ্ন।আমি বললাম বলুন না।তিনি বললেন আগে তুমি বলো তারপর বলবো।পরে হার মেনে বললাম আপনি যে নিচে আন্টিকে বলছিলেন ঐসময় ভাই ভুলবশত শুনে ফেলে।তারপর আমাকে এসে বললো আচ্ছা আপু ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে তাইনা।তখন আমি জানতে চাইলাম হটাৎ এই প্রশ্ন কেন তখন আপনাদের কথোপকথন বললো। শুনে তিনি আমার হাত ধরে তার সামনে বসিয়ে চিরুনি নিয়ে চুল বেনি করে দিতে দিতে বললেন।আচ্ছা বলতো সম্পর্কের ভিত্তি কি?আমি বললাম, বিশ্বাস। তিনি বললেন আমি জানি তুমি এমন কিছুই করবেনা।সেই বিশ্বাস আছে আমার।আর তাছাড়া স্বামী স্ত্রী এমন একটা সম্পর্ক যেখানে তাদের মাঝে লুকানোর কিছু থাকে না।তাছাড়া মানুষ মাত্রই ভুল হয়।তাই যদি কখনও আমরা ভুল করে থাকি আর নিজের ভুল বুজতে পেরে ক্ষমা চাই তো অবশ্যই তাকে ক্ষমা করা উচিৎ। তবে আমার মনে হয়না তুমি কোনো ভুল করবে।বলে তিনি চুল বেনি শেষে কপালে তার স্পর্শ দিলেন।তার কথা শুনে খুব খুশি হলাম মনটা ভরে গেলো।
তারপর আবারও বললাম এত বিশ্বাস।হম কেন তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না।আমি তার বুকে মাথা রেখে বললাম।আমার নিজের থেকেও বেশি আপনাকে বিশ্বাস করি।
নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম