আত্মসম্মান। লেখীকা: মম সাহা।

 ডিভোর্স টা নেওয়ার সময় আমাদের জিজ্ঞেস করেছিস একবারও? তবে এখন আমার বাড়ি আসলি কেনো?নিজের এক বছরের বাচ্চাটার কথাও ভাবলি না ঢ্যাং ঢ্যাং করে ডিভোর্স নিয়ে চলে আসলি?"

নিজের বাবার কথা নির্বাক হয়ে শুনে সুখ। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অবশেষে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হয়।স্বামীর নির্যাতনও তাকে এতটা পীড়া দেয় নি যতটা তার জন্মদাতা বাবার কথা দিচ্ছে।
ঘরের দরজা অব্দিও ঢুকতে দেয় না সুখকে।সুখ বাবার এমন কথা শুনে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল।সুখের বাবা আবারও ধমক দিয়ে বলল
-'এখনো দাঁড়িয়ে আছো? এ বাড়িতে তোমার ঠাঁই নেই।সমাজের মানুষের ছিঃ ছিঃ শুনতে হবে আমাদের তোমার জন্য? কখনোই না।বের হও।নিজের ঝামেলা নিজে বুঝে নেও।"
সুখ বাবার এমন আচারণে স্তব্ধ। বুঝতে পেরেছে এ ঘরে তার আর ঠাঁই হবে না।দূরে দাঁড়ানো মায়ের দিকে চাইল।মা আঁচলে মুখ গুজে কাঁদছে।
মায়ের দিক থেকে চোখ ফিরিযে সুখ বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-"সেদিন যদি একবার সরকারী চাকুরিজীবী ছেলে না খুঁজে ভালো মানুষ খুঁজতে আমার জন্য তবে তোমার এই চৌকাঠে আমার এক বছরের সন্তানকে নিয়ে দাঁড়াতে হতো না। আজকের মতন সেদিন যদি আমার ব্যাপারটা আমাকেই একবার বুঝে নিতে দিতে তবে আমার রৌদ্রকে হারাতে হতো না।আমার শরীরে বেইমানের তকমা লাগিয়ে কেউ প্রাণ দিতো না।
বাবা তুমি আমাকে জন্ম দিয়ে জন্মদাতা হয়েছো কিন্তু বাবা হতে পারো নি।আমার মা সবসময় তোমার সংসারে চুপ করে ছিলো।আমাদের চুপ করিয়ে রেখে জীবন টা শেষ করে দিলে।থাক বাবা তবে বিদায় নিলাম আমি।"
"সুখ আমিও যাবো দাঁড়া।"নিজের মায়ের কথায় থমকে যায় সুখ।
সুখের মা তার স্বামীর উদ্দেশ্যে বলল
" সারাজীবন তুমি মেয়ে দু-চোখে সহ্য করতে পারতে না।তোমার জন্য আমার দুইটা সন্তানকে গর্ভেই খুন করতে হয়।যাকে পৃথিবীর আলো দেখালাম,নাম রাখলাম সুখ তার জীবনটাও তছনছ করে দিলে সুখ কেড়ে নিলে।আর নয়।তোমার সংসার আর করছি না।"
সুখ নিজের মায়ের হাতটা ধরে বেরিয়ে গেলো।তাদের জানা নেই কোথায় যাবে তারা তবে এতটুকু জানে মেয়েদের আত্মসম্মান সবার আগে।
মেয়ে জাতি আত্মসমর্পণ করবে ততক্ষণ, যতক্ষণ তার আত্মসম্মান অক্ষত থাকবে।
নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম