অপেক্ষার ফল। লেখিকা: সুমাইয়া সুমু।

 'আমাকে একটু ভালোবাসবেন নিরব ভাই'?

'দেখো নিধি পা'গ'লা'মো করো না। আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না'।
'কিন্তু আপনার চোখ যে বলে দিচ্ছে আপনি আমায় ভালোবাসেন'।
"নিরব ভাই আর কিছু না বলে উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে রইলেন।" আমি নিধিরা নিধি। এবার এইচএসসি দিবো। বাবা-মায়ের দুইমাত্র সন্তান। আমরা এক ভাই, এক বোন। নিরব হচ্ছে আমার ভাইয়ার বন্ধু। আমার এক কাজিনের বিয়েতে নিরব ভাই এসেছিলেন। প্রথম দেখায় আমার তাকে ভালো লাগে। কিশোরী মনে অবুঝ অনুভুতি'রা উঁকি দেয়। সেই ভালোলাগা আস্তে আস্তে কখন ভালোবাসায় পরিনত হয়ে গেছে নিজেও জানি না। নিরব ভাইও যে আমাকে ভালোবাসে তা আমি বুঝতে পারি।
বর্তমান...
'কি হলো নিরব ভাই, কোনো কথা বলছেন না যে'?
'নিধি তুমি এখনো ছোট। এসব প্রেম-ভালোবাসা মাথা থেকে বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মনযোগ দাও। তুমি আমার থেকে অনেক ভালো কাউকে পাবে'।
'আমার যে আপনাকেই চাই নিরব ভাই'।
'বাচ্চামো করো না নিধি। আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না আগেও বলেছি, এখনো বলছি। তোমাকে ভালোবেসে আমি তোমার ভাইয়ার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারবো না। ও আমাকে অনেক বিশ্বাস করে, ভালোবাসে। একদম নিজের ভাইয়ের মতো দেখে। তোমাকে ভালোবেসে ওকে কষ্ট দিতে পারবো না'।
"এই কথা বলে নিরব ভাই আর একমুহূর্ত সেখানে দাঁড়ালেন না , চলে গেলেন। আমি রুমের দরজা বন্ধ করে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিলাম। শাওয়ারের পানির সাথে আমার চোখের অশ্রুও নিমিষে ধুঁয়ে চলে যাচ্ছে। ১ ঘন্টা শাওয়ার নিয়ে এসে একটা লম্বা ঘুম দিলাম।"
"সেইদিনের পর কেটে গেছে বেশ কিছুদিন। সেইদিনের পর থেকে নিরব ভাই আমাদের বাসায় আর আসেন না। তাকে এক পলক দেখার জন্য আমি চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করতাম। একদিন ভাইয়ার কাছ থেকে শুনলাম নিরব ভাই নাকি পড়াশোনার জন্য বিদেশ চলে গেছে। এই কথা শুনে যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মনে মনে বলেছিলাম 'তাহলে সত্যি কি আমি নিরব ভাইকে পাবো না'?
" তারপর নিজেকে একটু একটু করে শক্ত করে নিজের পড়ালেখা শেষ করলাম। এর মাঝে বাবা আমার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু আমি রাজী ছিলাম না তাই দিতে পারে নি। একদিন রাতে ভাইয়া আমার রুমে আসলো, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো..
'তুই কি আমাকে ভালোবাসিস'?
'আমি অবাক হয়ে বললাম, হঠাৎ এই কথা কেন বলছো ভাইয়া'।
'তুই আমাকে ভালোবাসিস কিনা বল'?
'আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি ভাইয়া'।
'তাহলে তুই কি একটাবার মুখ ফুটে বলতে পারলি না যে, তুই নিরবকে ভালোবাসিস'?
"আমার চোখদুটো ছলছল করে উঠলো, আমি কোনো কথা না বলে মাথা নিচু করে রইলাম।"
'ভাইয়া আবার বলে উঠলো, কিরে কথা বলছিস না কেন'?
'তুমি এসব কি করে জানলে ভাইয়া'।
'কালকে আমি তোর রুমে একটা বই নিতে এসেছিলাম সেখান থেকে তোর ডায়েরি'টা পাই। সেই ডায়েরি'টা পড়েই জানতে পারলাম যে, আমার ছোট বোন'টা এতোদিন যাবৎ নিজের মনে এতো কষ্ট বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে'।
"আমি কোনো কথা না বলে, ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।" ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো 'কাঁদিস না। নিরবকে একটা ফোন করি দাঁড়া।
"তারপর নিরব ভাইকে ফোন করে অনেক কথা বললো, বকাবকি করলো আর বললো আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে আসতে।" ভাইয়া বাবা-মা'কে আগেই রাজী করিয়ে ফেলেছে।
"দেখতে দেখতে ৭ দিন কেটে গেছে। নিরব ভাই বাংলাদেশে এসে তার বাবা-মা'কে নিয়ে আমাদের বাসায় আসলেন। আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে নিরব ভাইকে দেখলাম, সামনে গেলাম না। তার দুচোখ যেন কাউকে খুঁজছিলো। আমি জানি তার দুচোখ আমাকেই খুঁজছে তাও আমি সামনে যাই নি। দুই পরিবার মিলে ঠিক করলো আজকেই আমাদের কাবিন করিয়ে ফেলবে। কিছুদিন পর অনুষ্ঠান করে আমাকে নিয়ে যাবে।"
"মা এসে আমাকে রেডি করে নিয়ে গিয়ে নিরব ভাইয়ের পাশে বসিয়ে দিলেন। আমি নিরব ভাইয়ের দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম তিনি আমার দিকেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।"
"সবার সম্মতিতে আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়ে শেষ হতেই আমি সেখান উঠে আমার রুমে চলে গেলাম আর নিরব ভাই আমার যাওয়ার পানে অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলেন। ভাইয়া নিরব ভাইকে বললো 'যা আমার বোন'টার অভিমান ভা'ঙা'। ভাইয়ার দিকে একবার তাকিয়ে নিরব ভাই রুমে আসলেন। আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,,
'এখনো অভিমান করে থাকবে নিধি পাখি'।
" আমি তার দিকে ঘুরে তাকে জাপটে জড়িয়ে বললাম, আপনি খুব খারাপ নিরব ভাই। আপনি আমাকে ভালোবেসেও এতটা বছর কষ্ট দিলেন।"
'নিরব ভাইও আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,, আমার ভুল হয়ে গেছে নিধি পাখি। আর কখনো এমন হবে না। আজকে পর থেকে তোমার চোখ থেকে আমি এক ফোঁটা অশ্রু ও ঝরতে দিবো না প্রমিস'।
'আমি মুচকি হেসে বললাম, আমি কি আমার অপেক্ষার ফল পাবো না'?
'নিরব ভাই আমাকে বুক থেকে তুলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, কি চাও'?
'আমি বললাম,,,আপনাকে চাই'।
'নিরব ভাই বললেন,, আমি তো তোমার ছিলাম, তোমার আছি আর সারাজীবন তোমার'ই থাকবো। ভীষন ভালোবাসি নিধি পাখি'।
"আমি কোনো কথা না বলে মুচকি হেসে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলাম।"
নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম