একটি হৃদয় ভাঙ্গা স্বপ্ন। লেখিকা: সাদিয়া ইসলাম।

 --ওর হার্টে একটা ফুটো আছে তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করা দরকার।

রিপোর্ট হাতে নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো ডাক্তার।
সাদিয়ার বাবা একবার মেয়ের দিকে তাকালেন।তারপর ডাক্তারকে বললেন,যেহেতু অপারেশন করাই লাগবে তাই সময় নষ্ট করে দরকার নেই। দ্রুতই তারা অপারেশনটা জরে ফেলতে চায়।
ডাক্তারের কেবিন থেকে বেরিয়ে হাসপাতালের করিডোর দিয়ে হাঁটছে সাদিয়া আর তার বাবা।হাঁটছে মূলত সাদিয়ার বাব আর সাদিয়া লাফাচ্ছে!তার যে এতো বড় একটা অসুখ করেছে তা নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই!
সাদিয়দর বাবা অসহায় ভাবে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন।এই মেয়েকে তিনি কোনোদিন সিরিয়াস মুডে দেখেননি।পরীক্ষায় ফেল করেও সে দিব্বি মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায়।
---------
অপারেশনের দিন সাদিয়াকে অটিতে নেওয়া হয়েছে।এখন তাকে অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া হবে।
কিছুক্ষণ পরে একজন আসলো অ্যানেস্থেশিয়া দিতে।লোকটাকে দেখেই সাদিয়া খেলো বড় একটা বাঁশ না মানে ক্রাশ আরকি।সাদিয়াকে এমন ড্যাবড্যাপ করে তাকিয়ে তাকতে দেখে লোকটা প্রশ্ন করলো,এমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
সাদিয়া বুকের বাপাশে হাত রেখে বললো,হায়ে ম্যায় মারি যাওয়্যা।
সাদিয়ার কথা শুনে লোকটা অস্থির হয়ে বলে উঠলো,ব্যাথা করছে বেশি?
--নাহ্ ব্যাথা করতে যাবে কেন?
--তাহলে তুমি এমন করলা কেন?
--আরে ছাড়ুন তো এসব।আগে বলুন আপনি কি ডাক্তার?
লোকটা ভ্রু কুঁচকে বললো,কেন দেখে মনে হয় না?
--হাহ্ আই নিউ ইট।
--কি জানতে?
--এই যে আপনি ডাক্তার।
--তাহলে জিজ্ঞেস করলা কেন?
--শিউর হওয়ার জন্য।
--ওওহ্ আচ্ছা।
--হু।আচ্ছা আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে?
--না কেন?
--তাহলে কি আপনি বিবাহিত?
--কেন বলোতো?
--আরে বলুন না আপনি কি বিবাহিত?
--ইন্টার্নি শেষ করেছি মাত্র কয়েক বছর।এখনই কোন বাবা তার মেয়েকে আমায় দিবে বলোতো?
সাদিয়া ফট করে বলে দিলো,আবার বাবা দিবে।চাইলেই দিবে।
--এক্সকিউজ মি?
--বললাম আমার বাবা তার মেয়েকে দিবে আপনার কাছে।
--এই তুমি চুপ করোতো।এখন না তোমার অপারেশন হবে।তোমার কথার জ্বালায় আমি অ্যানেস্থেশিয়াও দিতে পারছি না।
--একটু পরে দিলে কি এমন হবে শুনি😒?
--উফফফ
--আচ্ছা আপনার নাম কি?
ডাক্তার জাস্ট তার নেমপ্লেটের দিকে ইশারা করলো।সাদিয়া দেখতে পেলো সুন্দর করে লেখা ডা.আরনাফ।
--আপনার নাম আরনাফ?
--হু।
সাদিয়া আফসোসের সুরে বলে উঠে, জানেন কতো ভেবেছিলাম আমার জামাইয়ের নাম হবে আদিব আরনাফ আহমেদ।কিন্তু দুঃখ একটা সিঙ্গেল আদিবও পেলাম না।আর আদিব আরনাফ আহমেদ পাওয়া তো অনেক দূরের কথা।
ডা.আরনাফ ভ্রু কুঁচকে অ্যানেস্থেশিয়া দিতে দিতে বললো,আমার পুরো নাম জানো কি?
--নাহ্ আপনি তো এখনো বলেন নি।
--আদিব আরনাফ আহমেদ!
কথাটা কর্ণগোচর হতেই চোখ বড় বড় করে তাকালো সাদিয়া।অবশেষে সে তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটির দেখা পেয়েছে।এখন তার ডান্স করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু আফসোস এখন আর তা সম্ভব নয়।
আজকে সাদিয়াকে রিলিজ দেওয়া হবে।সেদিনের পর আর সাদিয়া ডা.আরনাফ কে দেখেনি।এই নিয়ে তার দুঃখের শেষ নেই।বাড়িতে এসেই অবাক হয় সে।বাড়িটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।দেখে মনে হচ্ছে কোনো অনুষ্ঠান আছে।
এই সবে তার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।ডা.আরনাফের সম্পূর্ণ নাম জানার পর থেকে সাদিয়ার আর কিছুই ভালো লাগছে না।কিন্তু সাদিয়া এটা বুঝতে পারছে না আদিবকে দেখে ও এমন ক্রাশ কেন খেলো?এটা তো হওয়ার কথা ছিলো না।না কোনো ভাবেই না।সে কিছুতেই তার আদির উপর ক্রাশ খেতে পারে না।
পরের দিন সকালে সাদিয়া জানতে পারে আজকে তার বিয়ে!অন্য সময় হলে সে খুশিতে এতোক্ষণে পাগল হয়ে যতো। কিন্তু এখন সে কিছুতেই খুশি হতে পারছেনা।কারণ একটাই, ডা.আরনাফ!
--আমি বিয়ে করতাম না।
--কেন কি সমস্যা।দুই দিন আগেও তো চেচামেচি করছিলি কেন তোরে বিয়ে দেই না।এখন বিয়ে করবি না কেন?
--আম্মা গো আমার ওই ডাক্তার লাগবো।
--কোন ডাক্তার?
--ডাক্তার আদিব আরনাফ আহমেদ!
--আরে ছাগল ওই ডাক্তার আদিব আরনাফ আহমেদের সাথেই তো তোর বিয়ে!
কথাটা শুনে সাদিয়ার খুশি হওয়ার কথা।কিন্তু সে খুশি হতে পারেনি।তার আগেই তার আরামের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটালো তার ছোট ভাই পলক।
চোখ দুটো বন্ধ থাকা অবস্থাতেই কেঁদে উঠে সাদিয়া।তার কান্নায় কেউ পাত্তা দিলো না।কারণ এটা নতুন কিছু না। কিন্তু আজকের কান্না তো একটা হৃদয় ভাঙা স্বপ্নের কারণে তা কেউ জানে না!"এই পলইক্কা আর পাঁচ সেকেন্ড পরে ডাক দিলে কি কেউ তোরে চেলা কাঠ দিয়া মারতো রে হারামি"।
ওই ঐতিহাসিক স্বপ্ন দেখার পর থেকে সাদিয়ার মনে একের পর এক প্রশ্ন উদয় হয়,আচ্ছা বিয়েটাকি সম্পূর্ণ হইছিলো?আমি কি অনেক বেশি সাজছিলাম?আমি কি "মেরা সাইয়্যা সুপার স্টার" গানে আদির সাথে ডান্স করছিলাম?কি হতো এটা যদি সত্যি বা বাস্তব হতো?কি হতো এটা যদি স্বপ্ন সরি "একটি হৃদয় ভাঙ্গা স্বপ্ন" না হতো?
নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম